মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর জন্য ১০ টি সেরা ঘরোয়া উপায়
মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আজকাল মহিলাদের পেটের অতিরিক্ত মেদ
জমা হওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা।
কারণ আমাদের ব্যস্ত জীবনযাপনে অনিয়মিত খাবার খাওয়া, মানসিক চাপ, শারীরিক
পরিশ্রমের অভাব এবং ঠিকমতো ব্যায়াম না করার জন্য আমাদের পেটে চর্বি জমে যায়।
তবে মেদ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। প্রাকৃতিক কিছু উপায়ে আপনি এখন ঘরে বসেই
সহজে পেটের মেদ কমাতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
-
মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
-
গরম পানি আর লেবুর রস খেয়ে মেদ কমান
- মেদ কমাতে মধু এবং আদার চা পান করুন
-
সবুজ চা এবং গ্রিন টি খেয়ে মেদ কমান
-
মেদ কমাতে বেশি পানি এবং ফল খান
-
চিনি এবং লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন
-
প্রতিদিন দারুচিনির পানি পান করুন
-
খাবার পরে গরম পানি পান করুন
-
শসা এবং লেবু পানি পান করুন
- রাতে হালকা খাবার খেতে হবে
-
প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটার ব্যায়াম করুন
- মানসিক চাপমুক্ত থাকুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান
- নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন
- লেখকের মন্তব্যঃ মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই, যে
কিভাবে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে পেটের মেদ কমানো যায়। যদি আপনার এই সমস্যা
থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে
পারবেন ঘরে থাকা কোন খাবার গুলো খেলে আপনার পেটের মেদ কমে যাবে। আমাদের
দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম ব্যস্ততার জন্য আমরা আমাদের শরীরের ঠিকমতো যত্ন নিতে
পারি না। এছাড়াও বিভিন্ন কাজকর্ম এবং পারিবারিক জীবনে নানাবিধ ব্যস্ততাই শরীরের
প্রতি যত্ন এবং ব্যায়াম করারও সময় পাওয়া যায় না।
আমাদের খাওয়া দাওয়ার বদঅভ্যাসের কারণে পেটের মেদ জমে। যেমন অতিরিক্ত চর্বি
জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে মেদ জমে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি
পাওয়ার জন্য আমাদের নিয়মিত একটা খাদ্যাভাস তৈরি এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
এখন আমরা জানবো এগুলো কিভাবে খেলে এবং কি ধরনের হালকা ব্যয়াম করার মাধ্যমে পেটের
মেদ কমানো যায়। নিচে মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করা হলো।
গরম পানি আর লেবুর রস খেয়ে মেদ কমান
পেটের মেদ কমাতে সহজ ও কার্যকরী উপায় হল প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস
কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করা। কারণ লেবুতে থাকে
ভিটামিন সি ও অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। যাতে করে
পেটের হজম শক্তি বাড়ে এবং মেদ কমাতে সাহায্য করে। গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে
খেলে শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে এবং চর্বি গলাতে সাহায্য করে। তাই পেটের মেদ
কমাতে গরম পানি এবং লেবু রস অনেক উপকারি।
মেদ কমাতে মধু এবং আদার চা পান করুন
পেটের মেদ কমাতে মধু এবং আদা দুইটায় অনেক কার্যকারী উপাদান। কারণ মধু এবং আদা
দুইটাই প্রাকৃতিক ফ্যাট বার্নার। এক কাপ গরম পানিতে কিছুটা আদা কুচি ফুটিয়ে
তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ মধু
এবং আদা ফ্যাট বার্ন করে এতে করে পেটের হজম শক্তি ভালো হয় এবং পেটের ফোলভাব
ও গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
সবুজ চা এবং গ্রিন টি খেয়ে মেদ কমান
সবুজ চা বা গ্রীন টিতে আছে ক্যাফেইন আর ক্যাটেচিন নামে এক ধরনের
অ্যান্টিঅক্সিজেন। গ্রিন টি খেলে ক্ষুধা কিছুটা কমিয়ে দেয় এবং বিপাক গতি
কিছুটা বাড়িয়ে থাকে। প্রতিদিন ২-৩ বার গ্রিন টি খেতে পারেন।গ্রীন
টিতে মধু মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় ব্যায়ামের আগে এবং খাওয়ার
পরে গ্রিন টি খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। গ্রীন টি খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর সতেজ
হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে
শরীরের চর্বি কমতে সাহায্য করে। তাই মহিলাদের পেটের মেদ কমাতে নিয়মিত গ্রিন
টি খাওয়া উচিত।
মেদ কমাতে বেশি পানি এবং ফল খান
পেটের মেদ কমাতে পানি অনেক কার্যকরী কারণ পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। পানি
আমাদের শরীরে বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে ক্যালারি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্ষুধা
কমায় যাতে করে বাড়তি খাবার খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলা যায়। এছাড়াও পেটের মেদ
কমাতে ফল খাওয়া অনেক জরুরী যে ধরনের ফল পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে সেগুলো হল।
আপেল ,কমলা, তরমুজ, পেঁপে, স্ট্রবেরি এই ফলগুলো পেটের মেদ কমায়। কারণ এই ফলগুলোতে
রয়েছে যেমন, আপেলে রয়েছে ফাইবার সমৃদ্ধ উপাদান এবং কমলাতে রয়েছে ভিটামিন সি।
এছাড়াও তরমুজে রয়েছে বেশি পানি যা হাইড্রেশন বাড়ায়। এছাড়াও পেঁপে খেলে হজম
শক্তি ভালো থাকে এবং স্ট্রবেরিতে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান।কারণ
ফলে ফাইবার বেশি থাকে যাতে করে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং ভিটামিন খনিজ উপাদান
এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ এই ফলগুলোতে
প্রাকৃতিকভাবে চিনি থাকে যার জন্য মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এভাবেই
ফল এবং পানি খাওয়ার মাধ্যমে পেটের মেদ কমে যায়।
চিনি ও লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন
চিনি এবং লবণ পেটের মেদ বাড়ার জন্য অন্যতম একটি কারণ। চিনিতে অতিরিক্ত
ক্যালরি থাকে যা জমে যায় ফ্যাট আকারে। এছাড়াও বেশি লবণ খেলে শরীরে পানি ধরে
রাখে এতে করে শরীর ফুলে যায় এবং ওজন বেড়ে যায়। তাই আমাদের পেটের মেদ কমাতে
চিনি এবং লবণ খাওয়া বাদ দিতে হবে যাতে করে আমাদের শরীর থাকে মেদহীন এবং
সুস্থ।
প্রতিদিন দারুচিনির পানি পান করুন
দারুচিনি একটি প্রাকৃতিক উপাদান পেটের মেদ কমাতে দারুচিনির পানি পান করা অনেক
উপকারী। কারণ দারুচিনি মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই পানিতে
দারুচিনি দিয়ে গরম করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান
করুন। এই পানি পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এছাড়াও
ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় পেট পরিষ্কার রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এভাবে নিয়মিত দারুচিনির পানি পান করলে পেটের মেদ কমে যাবে।
খাবার পরে গরম পানি পান করুন
পেটের মেদ কমাতে খাবার পরে হালকা গরম পানি পান করা একটি সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায়।
কারণ গরম পানি হজম প্রক্রিয়া দ্রুত করে এবং শরীরে জমে থাকা চর্বি গলাতে সাহায্য
করে ও শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। কারণ ভারি খাবার খাওয়ার পরে হালকা গরম পানি
পান করলে শরীর চাঙ্গা থাকে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। তাই প্রতিদিন দুপুরে এবং
রাতের খাবারের ২৫-৩০ মিনিট পরে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান করার অভ্যাস করুন।
শসা এবং লেবু পানি পান করুন
লেবু এবং শসা পেটের মেদ কমাতে অনেক উপকারী কারণ শসাতে রয়েছে ফাইবার ও
উচ্চমাত্রার পানি যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শরীরের টক্সিন বের করে দিতে
সাহায্য করে। অন্যদিকে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেটাবলিজম
বাড়ায় এবং ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক লিটার পানিতে অর্ধেক লেবুর রস এবং শসার টুকরো
মিশিয়ে পান করুন। এই পানি নিয়মিত খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং মেদ কমতে সাহায্য
করে।
রাতে হালকা খাবার খেতে হবে
পেটের মেদ কমাতে হলে রাতে হালকা খাবার খেতে হবে কারণ রাতে ভারী খাবার খেলে হজমের
সমস্যা হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে। রাতে ঘুমের সময় শরীরের মেটাবলিজম ধীর
হয়ে যায়। তাই রাতে ভারী খাবার না খেয়ে সবজি, সুপ, অল্প ভাত আর ডাল খেতে পারেন।
এছাড়াও রাতের খাবার ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত যাতে করে হজম হয়ে যায়।
নিয়মিত এই অভ্যাস গড়ে তুললে মেদ কমে যাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।
প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটার ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন হাঁটার ব্যায়াম করা একটি সহজ এবং কার্যকারী কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ।
হাটার মাধ্যমে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় শরীরের ফ্যাট জমতে দেয় না এবং রক্ত সঞ্চালন
উন্নত করে। এছাড়াও সকাল এবং সন্ধ্যায় হাঁটলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই
প্রতিদিন থেকে ২০-৩০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটলে ক্যালরি কমে এবং পেটের মেদ
কমতে শুরু করে। তাই পেটের মেদ কমাতে প্রতিদিন হাটার অভ্যাস করুন।
মানসিক চাপমুক্ত থাকুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান
পেটের মেদ কমাতে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বাড়াই
যা পেটে চর্বি জমার বড় কারণ। তাই মানসিক চাপ কমাতে হালকা ব্যায়াম এবং ধ্যান
করুন। এছাড়াও প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমালে শরীরে হরমোন ব্যালেন্স ঠিক থাকে।
ঠিকমতো ঘুমালে বিপাকক্রিয়াকে সক্রিয় করে যা মেদ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও
পর্যাপ্ত ঘুমালে ক্ষুধার হরমোন বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা
যাই। তাই পেটের মেদ কমাতে চাপমুক্ত থাকা এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অনেক প্রয়োজন।
নিয়মিত হালকা ব্যাম করার অভ্যাস করুন
প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় কিছু সহজ ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন যেমন। সিট-আপ,
যোগব্যায়াম এবং স্কিপিং এই ব্যায়ামগুলো করলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়
এবং ধীরে ধীরে পেটের মেদ কমে যায়। এছাড়াও ব্যায়াম করলে শরীর সংক্রিয় থাকে এবং
হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
আরো পড়ুনঃ
অল্প বয়সে মাথার চুল পেকে যাওয়ার কারণ কি
নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্যার জমার প্রবণতা কমায় একদিকে যেমন শরীর ফিট রাখে
অন্যদিকে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। তাই প্রথমে সহজ ব্যায়াম অভ্যাস করেই পেটের
মেদ দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে কমাতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্যঃ মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান আজকের
আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে আপনি বুঝতে
পেরেছেন বাড়িতে বসেই ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে আপনার পেটের মেদ কমাবেন। এছাড়াও
কিভাবে কোন খাবারগুলো খেতে হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে
মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে যারা এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন
করেছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আজকের আর্টিকেলটি
আমার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনের মাঝে শেয়ার করে দিন। এবং আমার আর্টিকেল
সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে এসএমএস করে জানিয়ে
দিন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ঝরনা আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url